Community Based Activity- Gardening
Gardening ( বাগান তৈরি )
ভূমিকা -
মানব সভ্যতার একটি মৌলিক উপাদান হলো শিক্ষা। তবে এই শিক্ষা অবশ্যই ফলপ্রসূ হতে হবে, যা শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, পাঠ্যক্রম এবং শ্রেণীকক্ষের পরিবেশের উপর নির্ভর করে। এছাড়াও, শৌচাগার, খেলার মাঠ, গ্রন্থাগার, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। তবে একটি বিশেষ উপাদান হলো বাগান, যা বিদ্যালয় শিক্ষার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। একটি বিদ্যালয়ের সঠিক ব্যবস্থাপনায় একটি সুসজ্জিত বাগান শিক্ষার্থীদের আনন্দিত করে, বিদ্যালয়ের পরিবেশকে সুন্দর, শক্তিশালী, স্নিগ্ধ এবং সুশৃঙ্খল করে তোলে।
বাগান হলো একটি নির্দিষ্ট ভূমি যেখানে ফুল, ঘাস, গাছপালা, লতাপাতা উৎপাদনসহ অন্যান্য উদ্ভিদ সম্পর্কিত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ফুল ও ফল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ, নিষ্কাশন এবং আগাছা উৎপাটন করা হয়। সাধারণত শখের বশবর্তী হয়ে বাগান তৈরি করা হয়।
বাগান প্রস্তুতিকরণের উদ্দেশ্যসমূহ -
• বিদ্যালয়ের বাগান প্রস্তুতির পেছনে কিছু নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বিদ্যমান। সেগুলি হলো-
• বিদ্যালয়ের পরিবেশকে আকর্ষণীয় ও মনোরম করে তোলার জন্য বাগান তৈরি করা হয়।
• পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাগান প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
• শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও নান্দনিকতার বিকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে বাগান তৈরি করা হয়।
• বিদ্যালয়ের পরিবেশকে সুন্দর ও আনন্দময় করে তুলতে সমন্বিতভাবে কাজ করার মানসিকতা গড়ে তোলা।
• শিক্ষার্থীদের দলগত কাজের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা, বিশ্বাস ও অন্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার মতো গুণাবলী প্রকাশ পায়।
• বিদ্যালয়ে বাগান প্রস্তুতির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে মানসিক বিকাশ ঘটে।
• শিক্ষার্থীরা পরিবেশের সৌন্দর্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়।
• পরিবেশ দূষণের প্রতিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
বাগান প্রস্তুতিকরণের গুরুত্ব -
• বিদ্যালয় বাগান প্রস্তুতিতে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
• বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
• শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন গাছ, ফুল ও পাতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা গড়ে তোলে।
• পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে।
• শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও নান্দনিক ধারণার বিকাশ ঘটায়।
• বাগান চর্চার মাধ্যমে গাছ লাগানো ও পরিচর্যার ধারণা সৃষ্টি হয়।
• মানসিক শান্তির জন্য বাগান একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
• শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আগ্রহ বৃদ্ধি করে।
বাগান প্রস্তুতিকরণের স্থান নির্বাচন -
• বিদ্যালয়ের বাগান প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক।
• বিদ্যালয়ে বাগান গড়ার জন্য একটি উপযুক্ত ও নির্ধারিত স্থান নির্বাচন করা প্রয়োজন।
• বাগান নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত খোলামেলা জায়গা থাকা উচিত।
• বাগানে সূর্যের আলো ও বাতাসের প্রবাহ সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
• গাছের সুরক্ষার জন্য বাগানটিকে একটি বেড়াজাল দ্বারা ঘিরে রাখতে হবে, যাতে কোনো ক্ষতি না হয়।
• বাগান তৈরির জন্য উপযুক্ত মাটির উপস্থিতি অপরিহার্য, যেমন দোআঁশ মাটি গাছের জন্য উপযোগী।
• নির্বাচিত স্থানে যথেষ্ট পরিমাণে জল সেচন ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
বাগান প্রস্তুতিকরণের প্রয়োজনীয় উপকরণের তালিকা -
বাগান প্রস্তুতিকরণের জন্য যে সমস্ত উপকরণ গুলি ব্যবহৃত হয়, সেগুলি হল-
• কোদাল
• ঝুড়ি
• ঝাঁঝড়ি
• বালতি
• মগ
• নিরানি
• স্প্রে যন্ত্র
• কাঁচি
• কাস্তে
• কীটনাশক ও ওষুধ
• সার
• বেড়াজাল
উপকরণগুলি ব্যবহারিক প্রয়োেগ -
বাগান প্রস্তুতিকরণের যে সমস্ত উপকরণগুলি ব্যবহার করা হয়, তার ব্যবহারিক প্রয়োেগ গুলি হল-
• কোদাল - বাগানের মাটি কোপানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
• ঝুড়ি - বাগানে কোপানো মাটি ও হালকা ভার যুক্ত বস্তুকে বহন করার জন্য ব্যবহৃত করা হয়।
• ঝাঁঝড়ি - বাগানের গাছের সমস্ত অংশ ধুতে ব্যবহার করা হয়।
• বালতি - বাগানের গাছে জল দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত করা হয়।
• মগ - বালতিতে আনা জল গাছে দিতে মগ ব্যবহৃত করা হয়।
• স্প্রে যন্ত্র - বাগানে গাছের কীটনাশক ও ওষুধ স্প্রে করার জন্য স্প্রে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।
• কাঁচি - গাছের এলোমেলো অংশ কাটার জন্য ব্যবহৃত করা হয়।
• কাস্তে - গাছের পরিচর্যার জন্য ব্যবহৃত হয়।
• নিরানি - গাছের নিচে আগাছা দমন করা ও মাটি পরিচর্যা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
• কীটনাশক ও ওষুধ - বাগানের গাছের পরিচর্যার জন্য বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক কীটনাশক ও ওষুধ ব্যবহৃত করা হয়।
• সার - বাগানে গাছের বৃদ্ধির জন্য জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়।
• বেড়াজাল - বাগানের গাছের সংরক্ষণের জন্য বাগানের চারপাশে একটি বেড়াজাল দেওয়া হয়। এটি মূলত কাঠের হয়ে থাকে।
বাগান প্রস্তুতিকরণের পর্যায় -
বাগান নির্মাণের জন্য একটি সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রস্তুতিকরণের বিভিন্ন পর্যায় বা ধাপ রয়েছে। সেগুলি হল-
পর্যায় - ১
শিক্ষার্থীরা প্রথমে বাগান নির্মাণের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানকে নির্বাচন করতে হবে।
পর্যায় - ২
শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক/প্রধান শিক্ষিকা-এর নিকট অনুমতি নিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় বাগান প্রস্তুতিকরণের কাজ শুরু করতে হয়।
পর্যায় - ৩
প্রধান শিক্ষক/প্রধান শিক্ষিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দলে বিভক্ত করবেন এবং কার্য পরিচালনা করেন।
পর্যায় - ৪
প্রধান শিক্ষক/প্রধান শিক্ষিকার দ্বারা নির্বাচিত বিভিন্ন দলের দলনেতা দ্বারা নির্দেশ অনুযায়ী বাগান প্রস্তুতিকরণে কাজে অংশগ্রহণ করতে হয়।
পর্যায় - ৫
প্রতিটি দলের সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত স্থান পর্যবেক্ষণ করে মাটিকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে নিতে হয় এবং নিরানির মাধ্যমে আগাছাগুলি পরিষ্কার করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে আসতে হয়।
পর্যায় - ৬
এরপর চারাগাছ ও বীজ রোপনের আগে মাটিতে জল ও সার দিয়ে রোপণের জন্য উপযুক্ত মাটি পরিণত করতে হবে।
পর্যায় - ৭
গাছ লাগানোর আগে বাগানে চারপাশে একটি বেড়াজাল দিয়ে দিতে হবে, যাতে কেউ বাগানে ঢুকে গাছ নষ্ট না করতে পারে।
পর্যায় - ৮
গাছ লাগানোর পর গাছের উপর জল দিতে হবে ও কিছুদিন অন্তর কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
বাগান পরিচর্যা -
বাগানে বৃক্ষ রোপন করার পর পরে যে কাজগুলি করতে হয়। সেগুলিকে পরিচর্চা বলা হয়। এই পরিচর্যা গুলি হল-
• বৃক্ষ রোপণের পর প্রথমে চারা গাছকে সূর্যের তাপ ও প্রবল বৃষ্টির প্রভাব থেকে সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
• গাছের গোড়ায় এবং পার্শ্বে নিয়মিত জল দেওয়ার জন্য কুপিয়ে রাখতে হবে, যাতে গাছের গোড়ায় জল জমে না থাকে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
• গাছের গোড়ায় জন্ম নেওয়া আগাছাগুলি দ্রুত পরিষ্কার করার জন্য মনোযোগ দিতে হবে।
• গাছের গোড়ায় জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করা আবশ্যক।
• বাগানে গাছগুলোর উপর প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে কীটনাশক ও ঔষধ স্প্রে করা প্রয়োজন।
প্রধানশিক্ষক/প্রধান শিক্ষিকার ভূমিকা-
বাগান প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষিকার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষিকা বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন, যা নিম্নরূপ:
• প্রধান শিক্ষক/প্রধান শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই কাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন।
• তিনি শৌখিন নির্দেশনার মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন এবং শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রদান করেন।
• এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ তিনি নির্ধারণ করেন।
• তিনি অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, অশিক্ষক কর্মীদের এবং শিক্ষার্থীদের এই কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করেন।
• বাগান তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সামগ্রীর ব্যবস্থা করেন।
• এই কাজের জন্য শ্রমিক নিয়োগ করেন।
• শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাগান প্রস্তুতির জন্য ইকো ক্লাবের প্রস্তাবনা দেন।
শিক্ষক শিক্ষিকার ভূমিকা-
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষিকার পাশাপাশি শিক্ষক ও শিক্ষিকারা বাগান প্রস্তুতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নিম্নে তাদের কার্যাবলী বর্ণনা করা হলো-
• শিক্ষক ও শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের পরিবেশ এবং বাগান সম্পর্কিত জ্ঞান প্রদান করেন।
• তারা শিক্ষার্থীদের পরিবেশের গুরুত্ব ও বাগানের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করেন।
• বাগান নির্মাণের জন্য শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।
• শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার জন্য তারা নিজেও অনেক সময় বাগান তৈরিতে অংশগ্রহণ করেন।
• বাগানে বিভিন্ন গাছ, পাতা, ফুল ও ফল সম্পর্কে তথ্য শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করেন।
• বাগান প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।
অশিক্ষক কর্মীবৃন্দ ভূমিকা-
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/প্রধান শিক্ষিকা, শিক্ষক শিক্ষিকারা ছাড়াও অশিক্ষক কর্মীবৃন্দ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। সেই সম্পর্কে নিম্নে বলা হল-
১. বাগান তৈরির জন্য খরচের হিসাব-নিকাশ করেন।
২. বাগান তৈরির জন্য বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করেন।
৩. বাগানের প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রমিকদের ব্যবস্থা করেন।
৪. বাগানের গাছের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
৫. শিক্ষার্থীদের বাগানের কাজে সহায়তা প্রদান করেন।
প্রশিক্ষণকারী শিক্ষক/শিক্ষিকার ভূমিকা -
একজন প্রশিক্ষণ কারী শিক্ষক-শিক্ষিকার দায়িত্বে নির্বাচিত বিদ্যালয়ে বাগান প্রস্তুতির জন্য যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়, সেগুলি নিম্নরূপ:
• বাগান প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক/প্রধান শিক্ষিকার নির্দেশনাগুলি অনুসরণ করা।
• শিক্ষার্থীদের বাগান তৈরিতে উৎসাহিত করা।
• বাগান নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের সরবরাহে সহায়তা করা।
• অন্যান্য প্রশিক্ষণ কারীদের বাগান প্রস্তুতির কাজে উৎসাহিত করা।
• বাগান তৈরিতে ফুল ও ফলের গাছের চারাগাছ ও টব সংগ্রহ করা হয়েছে।
• শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ফুল ও ফলের টবে চারাগাছ লাগাতে সহায়তা করা।
• বিভিন্ন গাছ ও ঋতু ভিত্তিক গাছের তথ্য শিক্ষার্থীদের প্রদান করা।
• বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণগুলি শিক্ষার্থীদের বোঝানো।
• পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি সহ-পাঠ্যক্রমের কার্যক্রমকে আকর্ষণীয় করে তুলতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা।
শিক্ষার্থীর ভূমিকা -
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাগান প্রস্তুতিকরণের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের কার্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
• বাগানের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন এবং বাগানের ধরন সম্পর্কে ধারণা প্রদান।
• বাগানে কোন গাছগুলো লাগানো হবে, তার একটি তালিকা প্রস্তুত করা।
• প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অশিক্ষক কর্মী এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নির্দেশনা মেনে চলা।
• গাছের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করা, যেমন (i) সঠিক স্থান নির্বাচন, (ii) স্থানটি পরিষ্কার করা, (iii) চারাগাছ লাগানো, (iv) সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা, (v) প্রতিদিন গাছে জল দেওয়া।
বাগান প্রস্তুতির ভবিষ্যৎ মূল্য -
প্রতিটি কার্যকলাপের একটি ভবিষ্যৎ প্রতিক্রিয়া থাকে, যা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। বাগান প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও একটি ভবিষ্যৎ রয়েছে। এই প্রস্তুতির মূল্যগুলো নিম্নরূপ:
১. সামাজিক মূল্য -
মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে সমাজের ভালো-মন্দের জন্য দায়ী। বর্তমান সমাজে মানুষ যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনি বিক্ষোভ ও সমাজের উন্নয়নে তাদের অবদান অপরিসীম। এই দুইয়ের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সমাজ গড়ে ওঠে।
২. অর্থনৈতিক মূল্য -
বাগান প্রস্তুতির সামাজিক মূল্য ছাড়াও এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অত্যন্ত ব্যাপক। গাছের সৌন্দর্য অন্যদের আকৃষ্ট করে এবং তারা নিজেদের বাড়িতে বা অন্য স্থানে গাছ রোপণের জন্য উৎসাহী হয়। এর ফলে সেই বিশেষ গাছের বিক্রির হার বৃদ্ধি পায়।
৩ পরিবেশগত মূল্য -
বর্তমান নগরায়ণের প্রেক্ষাপটে বৃক্ষ নিধনের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা পরিবেশের বাস্তুতন্ত্র ও ভারসাম্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সুতরাং, পরিবেশের সুরক্ষা ও বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণ অপরিহার্য। এ কারণে বাগান তৈরির পরিবেশগত গুরুত্ব অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
৪. নান্দনিক মূল্য -
বাগান তৈরির মাধ্যমে পরিবেশ এবং বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌন্দর্য ও সৃজনশীলতার অনুভূতি বিকশিত হচ্ছে, যা নান্দনিক দিক থেকে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা-
বাগান প্রস্তুতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। যেমন:
• শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথাগত শিক্ষার পরিবর্তে ব্যবহারিক শিক্ষা ও নতুন শিক্ষার প্রসার ঘটছে।
• পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি সহ-পাঠ্যক্রমিক বিষয়গুলোর প্রতি শিক্ষার্থীদের ধারণা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
• শ্রমের মূল্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
• সময়ের মূল্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা উন্নত হচ্ছে।
• নেতৃত্বের গুণাবলী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিকশিত হচ্ছে।
• পারস্পরিক বিশ্বাস, সহযোগিতা এবং ঐক্যের ধারণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে উঠছে।
• হাতে-কলমে কাজ করার দক্ষতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিকশিত হচ্ছে।
• পরিবেশ সচেতনতা ও সংরক্ষণের ধারণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
• সৃজনশীলতা ও সৌন্দর্যবোধের পাশাপাশি পরিবেশ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরামর্শ -
বিদ্যালয় বাগান প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্বে আলোচনা করা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো হলো:
• বিদ্যালয় বাগান প্রতিষ্ঠা, পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থের বরাদ্দ নিশ্চিত করা আবশ্যক।
• এই প্রকল্পের জন্য একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন, যার প্রধান হিসেবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/প্রধান শিক্ষিকা থাকবেন, এবং এতে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা, অশিক্ষক কর্মী ও কিছু শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
• পর্যাপ্ত পরিমাণে বাগান পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে হবে।
• প্রয়োজনে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত বাগান প্রস্তুতকারীদের নিয়োগ দেওয়া উচিত।
• বাগানকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রকারের ফুলের গাছ রোপণ করতে হবে।
• কিছু নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করতে হবে, যেমন গাছে হাত না দেওয়া, পাতা না ছেঁড়া, ফুল না তোলা ইত্যাদি।
• বিদ্যালয়ে পরিবেশ বিষয়ক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
• বাগানের জন্য একজন মালি রাখতে হবে।
উপসংহার-
বর্তমান যুগের বিশ্বায়ন ও নগরায়নের প্রভাবে প্রতিদিন গাছ কাটা হচ্ছে এবং বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের দূষণ এবং রোগব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবেশে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে, তাই বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে নগরের পরিবেশকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিদ্যালয় থেকে শুরু করে গৃহ, রাস্তা ও খালি জায়গায় গাছ লাগানো প্রয়োজন। কারণ বৃক্ষরোপণ আমাদের নিজেদের স্বার্থে অপরিহার্য। শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের নাগরিক, তাই তাদের ছোটবেলা থেকেই পরিবেশ সচেতনতা ও সুরক্ষার ধারণা দেওয়া হলে পৃথিবী আরও সুন্দর হয়ে উঠবে। বিদ্যালয়ের বাগান তৈরি করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা ও সংরক্ষণের ধারণা গড়ে ওঠে। বিদ্যালয়ের বাগান তৈরির ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।