Community Based Activity- Assembly (সমাবেশ)

 Assembly (সমাবেশ)

(toc)

ভূমিকা: 

     সকাল দিনের সূচনা করে,  এবং শৈশবও দিনের সূচনা করে। অর্থাৎ, সকালের সূর্যোদয় আমাদের জানান দেয় যে সারা দিনটি কেমন যাবে। সমাবেশ বলতে বোঝায় একত্রিত হাওয়া সমবেত হাওয়া। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হওয়ার সময় সকল ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা একত্রিত হন। এই সমাবেশকে প্রার্থনা সঙ্গীত পরিবেশন বলা হয়। বিদ্যালয়ের সমাবেশ থেকেই  পঠনপাঠন কার্যক্রম  শুরু হয়। এর মাধ্যমে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবোধ ও  সুস্থ শিক্ষার পরিবেশ,  অর্থাৎ বিদ্যালয়ের গুণগত মান উপলব্ধি করা যায়। যদি বিদ্যালয়ের সমাবেশ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়,  তবে সারাদিনের পঠন-পাঠন ও  অন্যান্য কার্যক্রমও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। বিদ্যালয়ে সুশৃঙ্খলা বজায় রাখতে শিক্ষকদের শুরু থেকেই সচেতন থাকতে হবে। 


সময়সূচি :


    শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যালয়গুলির মধ্যে বৈচিত্র্য বিদ্যমান।  উদাহরণস্বরূপ,  সকালে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলিকে 'মর্নিং সেশন' এবং দুপুরের বিদ্যালয়কে 'ডে সেশন' বলা হয়। সাধারণত প্রাথমিক,  উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক,  উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে প্রার্থনার মাধ্যমে শিক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়।  প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রার্থনা সঙ্গীতের সময়সূচি ভিন্ন।  মর্নিং সেশন বিদ্যালয় গুলোতে প্রার্থনা সঙ্গীত সকাল,৭ টার মধ্যে এবং ডে  সেশন বিদ্যালয় গুলোতে ১০:৪৫ মিনিটে শুরু হয়। 

বিদ্যালয়ে সমাবেশের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:


বিদ্যালয়ে কার্যক্রমের সূচনা সমাবেশের মাধ্যমে হয়। অন্যান্য বিদ্যালয় কার্যক্রমের মতো সমাবেশেরও নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। 

যেমন- 

1. শিক্ষার উদ্দেশ্য হল একটি শিশুর সামগ্রিক বিকাশ সাধন করা।  এই বিদ্যালয়ের সমাবেশের মাধ্যমে শিশুর শারীরিক,  মানসিক,  বুদ্ধিগত উন্নয়ন ঘটবে। 
2. প্রার্থনা সঙ্গীতের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস গড়ে উঠবে,  যা তাদের ভবিষ্যত জীবনের জন্য সহায়ক হবে। 
3. প্রার্থনা সঙ্গীত ও জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যবোধ সৃষ্টি হবে, যা তাদের পরবর্তীতে দেশনেতা, সমাজসেবক বা দক্ষ নাগরিক গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। 
4. শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম ও স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। 
5. শিক্ষার্থীদের সংবাদ উপস্থাপন ও বাণী পাঠের মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে এবং জনসমক্ষে নিজেদের প্রকাশ করতে সক্ষম হবে। 
6. স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার উন্নয়ন ঘটে এবং তারা নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে শিখবে। 
7. যখন শিক্ষক কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন,  তখন শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করে,  যা তাদের প্রশ্ন করার দক্ষতা বৃদ্ধি করে। শিক্ষার্থীরা যুক্তি দিয়ে আলোচনা করতে সক্ষম হয়। 
8. শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপ্রেরণা জাগ্রত করে। 
9. শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐক্যের অনুভূতি বিকশিত হয়। 

বিদ্যালয়ে সমাবেশে হওয়ার পেছনে কারণ বা যুক্তি:


বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের  সমাবেশের পেছনে যে উদ্দেশ্য বা কারনগুলি বিদ্যমান,  সেগুলো নিম্নরূপ :


• শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তোলা। 
• শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের অনুভূতি উদ্দীপিত করা। 
• শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা ও ঐক্যের মনোভাব সৃষ্টি করা। 
• শিক্ষার্থীদের আধ্যাত্মিক উন্নয়ন সাধন করা। 
• শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপ্রেরণার অনুভূতি জাগ্রত করা। 
• শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়তা প্রদান করা। 

বিদ্যালয়ে সমাবেশ সংগঠনের পদ্ধতি:


বিদ্যালয় অভ্যন্তরে প্রাঙ্গন বা বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। 
• ক্লাস শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট আগে নির্ধারিত সময়ে ঘোষণা করা হয়। 
• সময় ঘোষণার পরই শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সমবেত সঙ্গীত প্রার্থনা গায়।
• সপ্তাহের ছয় দিন ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থনা সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে।  কোন দিন কোন প্রার্থনা সঙ্গীত গাওয়া হবে,  তা পূর্বেই নির্ধারিত করা হয়। 
• সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ আবশ্যিক এবং এতে সকলের আত্মবিশ্বাস ও বাক পটুত্বের উন্নয়ন ঘটে। 

সমাবেশের নিয়মাবলী :


1. প্রার্থনা সভা বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর ১৫ মিনিট আগে অনুষ্ঠিত হবে। 
2. শ্রেণীতে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ছাত্রছাত্রীরা তাদের নিজ নিজ ক্লাস অনুযায়ী লাইনে দাঁড়িয়ে শিক্ষক শিক্ষিকার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবে। 
3. ছাত্রছাত্রীরা প্রার্থনার জন্য শান্তভাবে দাঁড়িয়ে নিরবতা বজায় রাখবে। 
4. প্রার্থনা সভায় কোনো ধরণের কথা বলা নিষিদ্ধ। 
5. যারা সমাবেশের নেতৃত্ব দেবেন, তারা অন্যদের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকবেন। 
6. এরপর সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। 
7. প্রার্থনা সঙ্গীতটি অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষ হতে হবে। 
8. প্রার্থনা সঙ্গীত গাওয়ার পর জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হবে নির্ধারিত ৫২ সেকেন্ডের মধ্যে। 
9. এরপর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে রোল নম্বর অনুযায়ী প্রতিদিন একজন মহান ব্যক্তির বাণী পাঠ করতে হবে। 
10. তারপর একজন সংবাদ জানাবে অথবা কোনো ঘটনা থাকলে সে সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক আলোচনা করবেন। 

বিদ্যালয়ে সমাবেশের প্রস্তুতি পর্যায়:


বিদ্যালয়ে সমাবেশ প্রধান শিক্ষক,  সহ শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের  ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  এখানে খেলাধুলার  শিক্ষকের দায়িত্বও উল্লেখযোগ্য। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হবে। 

• প্রথমে ছাত্রছাত্রীরা উচ্চতার ভিত্তিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে,  ছোটো থেকে বড়।
•  শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে লাইনে দাঁড় করাতে হবে। 
• প্রথমে শ্রেণী সোজা করতে হবে, এরপর সাবধানতার সাথে বিশ্রাম নিতে হবে। 
• পরবর্তীতে,  নির্ধারিত দিনে একটি প্রার্থনা সঙ্গীত গাওয়া হবে। 
• এরপর জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার পালা আসবে। জাতীয় সঙ্গীতটি নির্ধারিত ৫২ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করতে হবে। 
•  এরপর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রোল নম্বর অনুযায়ী এক এক জনকে বাণী পাঠের দায়িত্ব থাকবে। 
• শেষে,  একজন সংবাদ জানাবে বা বিশেষ কোনো ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করবে। 

সরঞ্জাম:


বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে প্রার্থনা সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব দেখা যায়।  সাধারণত,  একটি নির্দিষ্ট স্থানে বা বিদ্যালয়ের মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সঙ্গীত গাওয়া হয়।  এরপর,  একটি সংবাদ পাঠ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বাণী থেকে একটি উদ্ধৃতি উপস্থাপন করা হয়, অথবা সংবাদপত্র থেকে বিশেষ খবর বা শিক্ষামূলক তথ্য সকল ছাত্রদের সামনে তুলে ধরা হয়। তবে কিছু বিদ্যালয়ে হারমোনিয়াম, তবলা, সংবাদপত্র,  হাজিরা খাতা, স্বাস্থ্য বিষয়ক ছবি ইত্যাদি সরঞ্জাম বিদ্যমান থাকে। 
এই সরঞ্জাম গুলো প্রতিদিনের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। অশিক্ষক কর্মীরা প্রতিদিন এগুলো বের করে এবং নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করেন। 

বিশেষ বিশেষ দিনে বিদ্যালয় সমাবেশে সম্ভাষণ:


কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়াকে সাধারণত সম্ভাষণ বা ভাষণ বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার উপর আলোচনা করার জন্য সভার আয়োজন করা প্রয়োজন। সভার আগে ছাত্রছাত্রীদের সতর্ক করার নোটিশ প্রদান করা এবং তাদের অভিভাবকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকলের জন্য বসার ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে করতে হবে,  এবং মাইক,  চেয়ার,  টেবিল ইত্যাদি দিয়ে মঞ্চের সজ্জা সুন্দরভাবে করতে হবে । সভায় সভাপতি সহ বিশেষ অতিথিদের নির্বাচন করা আবশ্যক। 

সমাবেশের ফলাফল:


• সমাবেশের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি হয়। 
• বিদ্যালয়ে সুশৃঙ্খলতা ও উন্নয়ন  অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হয়। 
• শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত জ্ঞানের পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় ও ব্যবহারিক বিষয়েও শিক্ষা প্রদান করা হয়। 
• শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম,  নিয়ম মেনে চলা এবং শৃঙ্খলার অনুভূতি জাগ্রত করা হয়। 
• শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো হয়। 
• শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক উন্নয়নে সহায়তা করা হয়। 
• শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক সংহতি ও  ঐক্যের মনোভাব গড়ে তোলা হয়। 
• ছাত্রজীবনকে সমৃদ্ধ ও পূর্ণতা প্রদান করা হয়। 

উপসংহার:


শিক্ষা মানব সভ্যতার একটি মৌলিক উপাদান এবং এর মাধ্যমে সমাজের অগ্রগতি সম্ভব। প্রতিটি শিক্ষার্থী সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ,  ফলে সমাজ তাদের থেকে কিছু প্রত্যাশা করে। সমাজের উন্নতির জন্য প্রয়োজন দক্ষ ও সুশৃঙ্খল ব্যক্তিদের। তাই বিদ্যালয়ের মূল দায়িত্ব হল শিশু শিক্ষার্থীদের দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। কারণ এই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যত সমাজের নির্মাতা।  বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়,  তার মধ্যে প্রার্থনা সঙ্গীত বা সমাবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সমাবেশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক,  জাতীয়তাবোধ এবং গনতান্ত্রিক মনোভাবের বিকাশ ঘটে। শিক্ষার্থীরা পুঁথিগত জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক জীবনের ধারণা লাভ করে, যা তাদের বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়তা করে। 


Download Full PDF 










Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!