Community Based Activity- Republic Day

 Republic Day

(toc)


ভূমিকা:


ভারতবর্ষের ইতিহাসে ২৬ শে জানুয়ারি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। দীর্ঘকালীন সংগ্রাম ও পরাধীনতার পর ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীনতা অর্জন করে।  স্বাধীনতার পর, দেশটির শাসন ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। ১৯৫০ সালে ২৬ শে জানুয়ারি প্রথমবারের মতো ভারতবর্ষের সংবিধান কার্যকর করা হয়,  যা সমগ্র দেশের জন্য একটি ভিত্তি স্থাপন করে। এই দিনটি 'প্রজাতন্ত্র দিবস' হিসেবে উদযাপিত হয়। স্বাধীনতা দিবসের মতো,  প্রজাতন্ত্র দিবসও প্রতিটি ভারতবাসীর নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে পালন করা উচিত। তাই, বিদ্যালয় পর্যায়ে এই দিনটিকে ছুটি হিসেবে না দেখে 'পালনীয় দিন' হিসেবে গণ্য করা হয়। 


প্রজাতন্ত্র দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি:


দীর্ঘ 200 বছর ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে।  সে সময় দেশের শাসন ব্যবস্থার জন্য একটি স্থায়ী সংবিধান ছিল না, ফলে পূর্ববর্তী আইনগুলো সংশোধিত উপনিবেশিক ভারত সরকার আইন ১৯৩৫ এর ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছিল। ১৯৪৭ সালের ২৯ শে আগস্ট ড.বি.আর. আম্বেদকরকে চেয়ারম্যান করে একটি স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের জন্য ড্রাফটিং কমিটি গঠনের উদ্দেশে একটি রেজোলিউশন পাঠানো হয়। এই কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে এবং ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বর গনপরিষদে জমা দেয়। জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত অধিবেশনটি ১৬৬ দিনের মধ্যে বিধানসভায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল,  যেখানে ব্যপক আলোচনা ও কিছু পরিবর্তনের পর 1950 সালের 24 জানুয়ারি বিধানসভায় 308 জন সদস্য দুটি হতে লেখা দলিল স্বাক্ষর করেন। এর ঠিক দুই দিন পর,  অর্থাৎ 1950 সালের 26 শে জানুয়ারি,  এই সংবিধান কার্যকর হয়। উল্লেখ 1929 সালের এই দিনটি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে নির্ধারিত হয়েছিল এবং পূর্ন স্বরাজের ধারণাটি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দ্বারা প্রচারিত হয়েছিল। ভারতের ইতিহাসে 26 শে জানুয়ারি 1950 তারিখে সংবিধান কার্যকর হওয়ার ফলে ভারতবর্ষের শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালিত হতে শুরু করে।  এই কারণে দিনটি "প্রজাতন্ত্র দিবস" হিসেবে পরিচিত। 

উদ্দেশ্যাবলী:


1. শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুভূতি জাগ্রত করা।
2. শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ঐক্যের ধারণা প্রতিষ্ঠা করা। 
3. প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা। 
4. শিক্ষার্থীদের নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন বৃদ্ধি করা। 
5. শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতীয় সংবিধানের গুরুত্ব উপলব্ধি করানো। 
6. স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রদ্ধার অনুভূতি তৈরি করা। 
7. শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলার ধারণা গড়ে তোলা ।
8. পাঠক্রমের বাইরের সহপাঠ্য কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে উৎসাহ বৃদ্ধি করা। 

বিদ্যালয়ে প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের পূর্ব প্রস্তুতি:


বিদ্যালয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য পূর্বে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা অবশ্যক। যেমন -

• অনুষ্ঠানের পূর্বে শিক্ষক/প্রধান শিক্ষিকা একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কার্যবিবরণী নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি নির্ধারিত দিনে আলোচনা সভার আয়োজন করবেন। 
• নির্ধারিত দিনে আলোচনা সভায় শিক্ষক,  শিক্ষিকা ও  অন্যান্য শিক্ষা কর্মীরা এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকবেন। 
• অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। 
• কমিটির নির্ধারিত সদস্যরা অনুষ্ঠানের দিন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা শ্রেণির শিক্ষক বা ক্লাস মনিটরের মাধ্যমে সংগ্রহ করবেন। 
• অনুষ্ঠানের সময়সীমা অনুযায়ী,  প্রত্যেক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত বাছাই পর্ব থেকে মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হবে। 

উপকরণ সমূহ:


বিদ্যালয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান পালনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ গুলি হল-

1. জাতীয় পতাকা ও পতাকা দন্ড।
2. স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিকৃতি।
3. প্রতিকৃতি বসানোর স্থান ও আচ্ছাদন। 
4. শহীদ বেদী নির্মাণ। 
5. ফুল, ফুলের মালা ও ফুলদানি।
6. ধূপ ও ধূপদানি।
7. বাদ্যযন্ত্র হারমোনিয়াম, তবলা ইত্যাদি। 
8. মাইক্রোফোন ও বক্স। 
9. রঙিন কাগজ ও আঠা।
10. দড়ি ও কাগজের পতাকা আকৃতি বিশেষ। 
11. মিষ্টি,  কেক,  জিলিপি  লজেন্স ইত্যাদি। 


বিদ্যালয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান পালন:


(i) পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ২৬ শে জানুয়ারি সকালে বিদ্যালয়ের ইউনিফর্ম পরিধান করে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়। 
(ii) শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে শহীদ বেদীর নিকট সমবেত হয়। 
(iii) 
এই দিনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/ শিক্ষিকা সহ শিক্ষক শিক্ষিকা গণ কমিটির সদস্যবৃন্দ, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ,  অশিক্ষক কর্মচারী এবং কিছু বিশেষ অতিথি ও অভিভাবকরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। 
(iv) এরপর কুচকাওয়াজের মাধ্যমে 
সকল শিক্ষার্থী সুশৃঙ্খলভাবে সারিবদ্ধ হয়ে অবস্থান নেয়। 
(v) পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/ শিক্ষিকা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। 
(vi) প্রধান শিক্ষক/ শিক্ষিকা প্রজাতন্ত্র দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে তার মতামত সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। 
(vii) এরপর একে একে সহ শিক্ষক শিক্ষিকা, বিশেষ অতিথি,  অশিক্ষক কর্মচারী ও অভিভাবকরা তাদের বক্তব্য প্রদান করেন। 
(viii) পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু সদস্য দিবসের উপর তাদের মতামত উপস্থাপন করেন। 
(ix) বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে 2 মিনিটের নিরবতা পালন করা হবে। 
(x) শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেমের সঙ্গীত,  সমবেত গান,  দেশাত্মবোধক কবিতা,  আবৃত্তি,  বক্তৃতা,  নাটক, নৃত্য ইত্যাদি পরিবেশন করে। 
(xi) শেষে সমাবেতভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। 
(xii) জাতীয় সঙ্গীতের পর প্রধান শিক্ষক/ শিক্ষিকা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। 
(xiii) এরপর সকলের মধ্যে মিষ্টি,  লাড্ডু , কেক,  লজেন্স বিতরণ করা হয়। 
(xiv) শিক্ষক/ শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি গণনা করেন। 

বিদ্যালয়ে প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা :


ভারতবর্ষ একটি সার্বভৌম,  সমাজতান্ত্রিক,  ধর্মনিরপেক্ষ এবং গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে ভারতীয়দের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ন্যায়বিচারের অধিকার,  তাদের চিন্তা, বিশ্বাস,  ধর্মীয় বিশ্বাস,  বাসনা, মর্যাদা ও সুযোগের সমতা এবং ব্যক্তিগত মর্যাদা ও সৌভ্রাতৃত্বের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।  1949 সালের 26 নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হয়,  যা 1950 সালের 26 জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। 

    ন্যায়বিচার,  স্বাধীনতা,  সাম্য এবং ভ্রাতৃত্ব রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনের গুণগত মান নির্ধারণ করে। তাই প্রজাতন্ত্র দিবসটি বিদ্যালয় পর্যায় থেকে শুরু করে সমগ্র ভারতবর্ষের প্রশাসনিক দপ্তরে উদযাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

বিদ্যালয়ে প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের তাৎপর্য:


বিদ্যালয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের উদযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কিছু মূল দিক হল:

• ভারতবর্ষের প্রজাতন্ত্র দিবস পালন প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের নৈতিক কর্তব্য এবং দায়িত্ব। তাই বিদ্যালয়ের পরিবেশে এই দিনটি ছুটি নয়,  বরং "উদযাপনীয় দিবস " হিসেবে গন্য করা হয়। 
• এই বিশেষ দিনে আমরা আমাদের ঐতিহ্য,  সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে স্মরণ করি। 
• দেশপ্রেমের "উৎসর্গীকৃত প্রাণ" মহান বিপ্লবী ও দেশসেবকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই দিনটি আমাদের সুযোগ দেয়। 
• অজ্ঞতা,  সামাজিক অশিক্ষা এবং কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে হলে সঠিক শিক্ষার প্রয়োজন,  এবং এই ক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অপরিসীম। তাই প্রকৃত স্বাধীনতার অনুভূতি লাভের জন্য বিদ্যালয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের উদযাপন অপরিহার্য। 
• শ্রদ্ধা,  সাহস,  আত্মবিশ্বাস,  উদ্যম,  অটল ধৈর্য, কার্যকারিতা এবং ঐক্যবদ্ধতা।

বিদ্যালয়ের স্বাধীনতা দিবস পালনের বিভিন্ন ব্যক্তিদের ভূমিকা:


প্রধান শিক্ষক/ শিক্ষিকা:-


• বিদ্যালয়ে বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেমন প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব আয়োজন করা এবং সকলের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া। 
• অন্যান্য শিক্ষক/ শিক্ষিকাদের এই কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করা। 
• বিদ্যালয়ে বিভিন্ন দিবস উদযাপনের সময় অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো। 
• প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা। 

শিক্ষক/ শিক্ষিকার ভূমিকা:-


• প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব ও  তাৎপর্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা। 
• অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি সদস্যের মধ্যে নির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন করা। 
• প্রজাতন্ত্র দিবসের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা প্রস্তুত করা। 
• শিক্ষক-শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা। তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানের আগের দিন শহীদ বেদী ও মঞ্চ সাজানো এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা। 
• শিক্ষার্থীদের এই কাজে উৎসাহিত করা। 
• শিক্ষক-শিক্ষিকার 

প্রশিক্ষণ শিক্ষকের ভূমিকা:-


• প্রজাতন্ত্র দিবস সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবগত করা। • শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সহায়তা করা। 
• শিক্ষার্থীদের এই কাজে উৎসাহিত করা। 
• প্রজাতন্ত্র দিবসের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে ( গান,  কবিতা ইত্যাদি) অংশগ্রহণে উৎসাহ প্রদান করা। 

শিক্ষার্থীদের ভূমিকা:


• প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা। 
• বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা। 
• প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকা। 
• অনুষ্ঠানের মঞ্চ ও  শহীদ বেদী সাজানোর কাজ করা। 
• অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা। 

উপসংহার:


বিদ্যালয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের উদযাপন একটি সাধারণ অনুষ্ঠান নয়,  বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক কার্যক্রম । এটি অন্যান্য ছুটির মতো নয়,  বরং ভারতবর্ষের ইতিহাস,  দেশের উন্নয়ন এবং বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা অত্যন্ত জরুরি। এই দিবসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় চেতনা জাগ্রত করা এবং প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার একটি অনন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়।  এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা সম্ভব। 


Download Full PDF 




Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!